এসইও টিউটোরিয়াল -- দ্বিতীয় পর্ব : অন পেইজ এসইও (SEO Tutorial Part 2: ON Page SEO)

এসইও টিউটোরিয়াল - দ্বিতীয় পর্ব  অন পেইজ এসইও

আমাদের এসইও টিউটোরিয়ালের প্রথম পর্বে আমরা কিওয়ার্ড রিসার্চ নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা জেনেছি কিভাবে সঠিক কিওয়ার্ড খুঁজে বের করে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে হয়। কিওয়ার্ড রিসার্চ আপনার অনলাইন সাফল্যের প্রথম ধাপ ছিল, এবং এখন আমরা দ্বিতীয় ধাপে পা রাখছি - অন পেইজ এসইও।

এসইও টিউটোরিয়াল - প্রথম পর্ব : কিওয়ার্ড রিসার্চ

অন পেইজ এসইও (On-Page SEO) হলো আপনার ওয়েবসাইটের ভেতরের উপাদান, যেমন - কন্টেন্ট, শিরোনাম, মেটা ডেসক্রিপশন, ইউআরএল এবং অন্যান্য বিষয়বস্তু সার্চ ইঞ্জিনের জন্য অপটিমাইজ করার প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে, আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে আরও বোধগম্য করে তোলেন এবং ব্যবহারকারীদের জন্য এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলেন। অন্যভাবে বললে, আপনার ওয়েবসাইটের ভিতরের সবকিছুকে সার্চ ইঞ্জিন এবং ব্যবহারকারীর জন্য উপযুক্ত করে তোলার কৌশলই হলো অন-পেজ এসইও।

যদি আপনার ওয়েবসাইটের ভিতরের বিষয়বস্তু সার্চ ইঞ্জিন এবং ব্যবহারকারীদের জন্য অপটিমাইজ করা না থাকে, তাহলে আপনার সাইটের র‍্যাঙ্কিং কমে যেতে পারে। তাই, অন-পেজ এসইও ওয়েবসাইটের ট্র্যাফিক এবং পারফরম্যান্সের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই পর্বে, আমরা অন পেইজ এসইও-এর বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যার মধ্যে রয়েছে:

  • কন্টেন্ট অপটিমাইজেশন
  • টাইটেল ট্যাগ এবং মেটা ডেসক্রিপশন
  • হেডিং ট্যাগ
  • ইউআরএল স্ট্রাকচার
  • ইন্টারনাল লিংকিং
  • ইমেজ অপটিমাইজেশন
  • মোবাইল-ফ্রেন্ডলিনেস
  • ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা

আমাদের মূল ফোকাস থাকবে "অন পেইজ এসইও"-এর ওপর, কারণ এই বিষয়গুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পাতায় নিয়ে আসা অনেকখানি সহজ হয়ে যাবে। তো, চলুন শুরু করা যাক!

অন পেইজ এসইও কি? (What is On-Page SEO?)

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, অন পেইজ এসইও হলো আপনার ওয়েবসাইটের প্রতিটি পৃথক পেজের ভেতরে কিছু নির্দিষ্ট পরিবর্তন আনা বা অপটিমাইজ করার প্রক্রিয়া। এর মূল উদ্দেশ্য হলো আপনার কন্টেন্টকে সার্চ ইঞ্জিন (যেমন গুগল) এবং আপনার ওয়েবসাইটের দর্শকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় এবং সহজে বোধগম্য করে তোলা।

ব্যাপকভাবে, অন পেইজ এসইও-এর মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন এবং সেগুলোকে অপটিমাইজ করতে পারেন:

  • কন্টেন্ট: আপনার লেখা আর্টিকেল, ব্লগ পোস্ট, পণ্যের বিবরণ ইত্যাদি।
  • শিরোনাম (Title Tags): প্রতিটি পেজের শিরোনাম যা সার্চ রেজাল্টে দেখায়।
  • মেটা ডেসক্রিপশন (Meta Descriptions): পেজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ যা সার্চ রেজাল্টের নিচে দেখায়।
  • হেডিং ট্যাগ (Heading Tags - H1, H2, H3 ইত্যাদি): আপনার কন্টেন্টের বিভিন্ন অংশকে ভাগ করার জন্য ব্যবহৃত শিরোনাম।
  • ইউআরএল (URLs): আপনার ওয়েবসাইটের প্রতিটি পেজের ঠিকানা।
  • ইমেজ (Images): আপনার পেজে ব্যবহৃত ছবি এবং তাদের বিবরণ (অল্টার টেক্সট)
  • ইন্টারনাল লিংক (Internal Links): আপনার ওয়েবসাইটের এক পেজ থেকে অন্য পেজে সংযোগ স্থাপনকারী লিংক।
  • ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা (User Experience - UX): আপনার ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড, মোবাইল-ফ্রেন্ডলিনেস এবং সামগ্রিক ডিজাইন।

কেন অন পেইজ এসইও, টেকনিক্যাল এসইও এবং অফ পেইজ এসইও থেকে আলাদা:

অন পেইজ এসইও, টেকনিক্যাল এসইও এবং অফ পেইজ এসইও - এই তিনটিই এসইও-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে এদের কাজের ক্ষেত্র ভিন্ন:

টেকনিক্যাল এসইও (Technical SEO):   

এটি আপনার ওয়েবসাইটের প্রযুক্তিগত দিকগুলোর অপটিমাইজেশনের সাথে সম্পর্কিত। এর মধ্যে রয়েছে ওয়েবসাইটের স্পিড, মোবাইল-ফ্রেন্ডলিনেস, সাইট স্ট্রাকচার, ক্রলিবিলিটি (সার্চ ইঞ্জিন বটের জন্য ওয়েবসাইটকে অ্যাক্সেসযোগ্য করা), ইনডেক্সিং (সার্চ ইঞ্জিনের ডেটাবেজে আপনার পেজগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা), এসএসএল সার্টিফিকেট এবং আরও অনেক কিছু। টেকনিক্যাল এসইও নিশ্চিত করে যে আপনার ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিন কর্তৃক অ্যাক্সেস এবং ইনডেক্স করার জন্য প্রস্তুত। 
 

অফ পেইজ এসইও (Off-Page SEO): 

এটি আপনার ওয়েবসাইটের বাইরে করা কার্যকলাপের সাথে সম্পর্কিত যা আপনার ওয়েবসাইটের র‍্যাঙ্কিংকে প্রভাবিত করে। এর প্রধান উদাহরণ হলো ব্যাকলিংক তৈরি করা (অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে আপনার ওয়েবসাইটে লিংক) এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ব্র্যান্ড মেনশন এবং অনলাইন খ্যাতি ব্যবস্থাপনাও অফ পেইজ এসইও-এর অংশ। অফ পেইজ এসইও আপনার ওয়েবসাইটের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং কর্তৃত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

অন্যদিকে, অন পেইজ এসইও সরাসরি আপনার ওয়েবসাইটের ভেতরের কন্টেন্ট এবং এইচটিএমএল সোর্স কোডের অপটিমাইজেশনের উপর মনোযোগ দেয়। আপনি আপনার কন্টেন্ট, মেটা ট্যাগ, হেডিং এবং অন্যান্য অন-পেজ উপাদান পরিবর্তন করে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে আপনার পেজের বিষয়বস্তু আরও ভালোভাবে তুলে ধরতে পারেন।

সংক্ষেপে, অন পেইজ এসইও হলো আপনার ওয়েবসাইটের নিজস্ব কন্টেন্ট এবং কাঠামোর অপটিমাইজেশন, টেকনিক্যাল এসইও হলো আপনার ওয়েবসাইটের প্রযুক্তিগত ভিত্তির অপটিমাইজেশন, এবং অফ পেইজ এসইও হলো আপনার ওয়েবসাইটের বাইরের প্রচার খ্যাতির ব্যবস্থাপনা। এই তিনটি ক্ষেত্র একসাথে কাজ করলে একটি শক্তিশালী এসইও কৌশল তৈরি হয়।

কেন অন পেইজ এসইও গুরুত্বপূর্ণ? (Why is On-Page SEO Important?)

অন পেইজ এসইও আপনার ওয়েবসাইটের সাফল্যের জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটিকে উপেক্ষা করা আপনার অনলাইন দৃশ্যমানতা এবং ব্যবসার বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। নিচে অন পেইজ এসইও-এর কয়েকটি প্রধান গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:

সার্চ ইঞ্জিনকে আপনার কন্টেন্ট বুঝতে সাহায্য করে: 

সার্চ ইঞ্জিনগুলো অত্যাধুনিক অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ওয়েবসাইটগুলোকে ইনডেক্স এবং র‍্যাংক করে। অন পেইজ এসইও আপনার কন্টেন্টকে এমনভাবে অপটিমাইজ করে যাতে সার্চ ইঞ্জিন সহজেই বুঝতে পারে আপনার পেজটি ঠিক কী বিষয়ে এবং কোন নির্দিষ্ট কিওয়ার্ডের জন্য এটি প্রাসঙ্গিক। সঠিক টাইটেল ট্যাগ, মেটা ডেসক্রিপশন, হেডিং এবং কিওয়ার্ডের ব্যবহার সার্চ ইঞ্জিনকে আপনার কন্টেন্টের মূল বার্তা বুঝতে সাহায্য করে, যার ফলে আপনার পেজ সঠিক অনুসন্ধানের ফলাফলে প্রদর্শিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
 

ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করে: 

অন পেইজ এসইও শুধু সার্চ ইঞ্জিনের জন্য নয়, আপনার ওয়েবসাইটের দর্শকদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালোভাবে অপটিমাইজ করা পেজ সাধারণত সহজে পড়া যায়, দ্রুত লোড হয় এবং মোবাইল-বান্ধব হয়। স্পষ্ট হেডিং, সাব-হেডিং এবং প্যারাগ্রাফ ব্যবহার করে কন্টেন্টকে সুগঠিত করলে ব্যবহারকারীদের তথ্য খুঁজে পেতে সুবিধা হয়। ইমেজ অপটিমাইজেশন পেজের লোডিং স্পিড বাড়াতে সাহায্য করে। ইন্টারনাল লিংকিং ব্যবহারকারীদের আপনার ওয়েবসাইটের অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট খুঁজে পেতে সাহায্য করে, যা তাদেরEngagement বাড়ায় এবং বাউন্স রেট কমায়। একটি উন্নত ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা সরাসরি আপনার র‍্যাঙ্কিং-এর উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
 

আপনার নির্বাচিত কিওয়ার্ডের জন্য র‍্যাংক করার সম্ভাবনা বাড়ায়:  

আপনি প্রথম পর্বে যে কিওয়ার্ড রিসার্চ করেছেন, সেই কিওয়ার্ডগুলোর জন্য আপনার পেজগুলোকে র‍্যাংক করাতে অন পেইজ এসইও অপরিহার্য। আপনার টাইটেল, মেটা ডেসক্রিপশন, হেডিং এবং কন্টেন্টের মধ্যে কিওয়ার্ডগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সার্চ ইঞ্জিন বুঝতে পারে যে আপনার পেজটি নির্দিষ্ট অনুসন্ধানের জন্য একটি উপযুক্ত উত্তর। এর ফলে আপনার পেজটি সেই কিওয়ার্ডের জন্য উচ্চতর অবস্থানে র‍্যাংক করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
 

ওয়েবসাইটের ট্র্যাফিক এবং পারফরম্যান্স উন্নত করে:  

যখন আপনার ওয়েবসাইট সঠিকভাবে অন পেইজ অপটিমাইজ করা হয় এবং ভালো র‍্যাংক করে, তখন আপনার ওয়েবসাইটে অর্গানিক ট্র্যাফিকের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই ট্র্যাফিক সাধারণত অত্যন্ত মূল্যবান হয় কারণ এই ভিজিটররা সক্রিয়ভাবে আপনার দেওয়া তথ্য, পণ্য বা পরিষেবা খুঁজছেন। অধিক ট্র্যাফিক মানে আপনার ব্যবসার জন্য আরও বেশি সুযোগ, যা লিড জেনারেশন, সেলস এবং ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। সামগ্রিকভাবে, শক্তিশালী অন পেইজ এসইও আপনার ওয়েবসাইটের অনলাইন পারফরম্যান্সকে উন্নত করে।

সংক্ষেপে, অন পেইজ এসইও আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন এবং ব্যবহারকারী উভয়ের কাছে আরও আকর্ষণীয়, প্রাসঙ্গিক এবং ব্যবহারযোগ্য করে তোলে। এটি আপনার ওয়েবসাইটের দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করে, সঠিক দর্শকদের আকর্ষণ করে এবং শেষ পর্যন্ত আপনার অনলাইন লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। এটিকে অবহেলা করা আপনার এসইও প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দিতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ অন পেইজ এসইও উপাদান (Important On-Page SEO Elements):

অন পেইজ এসইও-এর সাফল্যের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা আপনার ওয়েবসাইটের প্রতিটি পেজে সঠিকভাবে অপটিমাইজ করা উচিত। নিচে এই উপাদানগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

1. কন্টেন্ট অপটিমাইজেশন (Content Optimization):

কন্টেন্ট হলো আপনার ওয়েবসাইটের মূল ভিত্তি। এটি শুধুমাত্র আপনার দর্শকদের জন্য মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে না, বরং সার্চ ইঞ্জিনকে আপনার পেজের বিষয়বস্তু বুঝতেও সাহায্য করে। কার্যকর কন্টেন্ট অপটিমাইজেশনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ:

উচ্চ মানের এবং প্রাসঙ্গিক কন্টেন্টের গুরুত্ব:  
 
আপনার কন্টেন্ট অবশ্যই উচ্চ মানের, তথ্যপূর্ণ, নির্ভুল এবং আপনার দর্শকদের জন্য প্রাসঙ্গিক হতে হবে। এটি তাদের প্রশ্নের উত্তর দেবে, সমস্যার সমাধান করবে অথবা তাদের আগ্রহের বিষয়বস্তু সরবরাহ করবে। দুর্বল বা অপ্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট আপনার বাউন্স রেট বাড়াতে পারে এবং র‍্যাঙ্কিং-এর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
 
কিওয়ার্ডের সঠিক ব্যবহার (প্রাকৃতিক এবং প্রাসঙ্গিকভাবে):  
 
আপনার নির্বাচিত ফোকাস কিওয়ার্ড এবং প্রাসঙ্গিক সেকেন্ডারি কিওয়ার্ডগুলো আপনার কন্টেন্টের মধ্যে স্বাভাবিক এবং প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত কিওয়ার্ড স্টাফিং (অস্বাভাবিকভাবে ঘন ঘন কিওয়ার্ড ব্যবহার করা) পরিহার করুন, কারণ এটি সার্চ ইঞ্জিন কর্তৃক স্প্যাম হিসেবে গণ্য হতে পারে। কিওয়ার্ডগুলো আপনার কন্টেন্টের শিরোনাম, উপশিরোনাম এবং মূল অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উচিত।
 
কন্টেন্টের গঠন (হেডিং, সাব-হেডিং, প্যারাগ্রাফ): 
 
আপনার কন্টেন্টকে সুস্পষ্ট হেডিং (H1-H6) এবং সাব-হেডিং ব্যবহার করে সংগঠিত করুন। H1 ট্যাগটি সাধারণত পেজের প্রধান শিরোনামের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এতে আপনার ফোকাস কিওয়ার্ড থাকা উচিত। সাব-হেডিংগুলো (H2-H6) আপনার কন্টেন্টের বিভিন্ন অংশকে ভাগ করে এবং পাঠকদের জন্য তথ্য সহজে স্ক্যান করতে সাহায্য করে। ছোট এবং সহজে পঠনযোগ্য প্যারাগ্রাফ ব্যবহার করুন।
 
লম্বা এবং বিস্তারিত কন্টেন্টের সুবিধা:  
 
সাধারণত, লম্বা এবং বিস্তারিত কন্টেন্ট (১০০০+ শব্দ) একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে আরও গভীরভাবে আলোচনা করে এবং ব্যবহারকারীদের আরও বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হয়। এর ফলে এটি সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে ভালো র‍্যাংক করার সম্ভাবনা রাখে। তবে, দৈর্ঘ্যের চেয়ে কন্টেন্টের গুণমান এবং প্রাসঙ্গিকতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
 
পুরনো কন্টেন্ট আপডেট করার গুরুত্ব:  
 
আপনার ওয়েবসাইটে থাকা পুরনো এবং অপ্রচলিত কন্টেন্ট নিয়মিত আপডেট করা উচিত। নতুন তথ্য যোগ করা, ভুল সংশোধন করা এবং কন্টেন্টকে আরও উন্নত করার মাধ্যমে আপনি এটিকে আরও প্রাসঙ্গিক এবং মূল্যবান করে তুলতে পারেন, যা আপনার র‍্যাঙ্কিং-এর জন্য ইতিবাচক হতে পারে।
 

2. টাইটেল ট্যাগ এবং মেটা ডেসক্রিপশন (Title Tag and Meta Description):

টাইটেল ট্যাগ এবং মেটা ডেসক্রিপশন হলো দুটি গুরুত্বপূর্ণ এইচটিএমএল ট্যাগ যা সার্চ রেজাল্ট পেজে (SERP) আপনার ওয়েবসাইটের লিংক এবং সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেখায়। এগুলো ব্যবহারকারীদের আপনার লিংকে ক্লিক করার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে এবং সার্চ ইঞ্জিনকে আপনার পেজের বিষয়বস্তু বুঝতে সাহায্য করে।

টাইটেল ট্যাগের গুরুত্ব এবং অপটিমাইজ করার নিয়ম:

  • টাইটেল ট্যাগ হলো আপনার পেজের প্রধান শিরোনাম এবং এটি সার্চ রেজাল্টে সবচেয়ে prominentভাবে প্রদর্শিত হয়।
  • প্রতিটি পেজের জন্য একটি অনন্য এবং আকর্ষণীয় টাইটেল ট্যাগ তৈরি করুন।
  • আপনার প্রধান ফোকাস কিওয়ার্ডটি টাইটেলের শুরুতে বা কাছাকাছি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
  • টাইটেলের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৫০-৬০ অক্ষরের মধ্যে রাখা উচিত যাতে এটি সম্পূর্ণরূপে প্রদর্শিত হয়।
  • ব্র্যান্ডের নাম টাইটেলের শেষে যোগ করতে পারেন (যেমন: "সেরা কফি মেকার কোনটি? - [আপনার ব্র্যান্ডের নাম]")

আকর্ষণীয় মেটা ডেসক্রিপশনের গুরুত্ব এবং লেখার নিয়ম:

  • মেটা ডেসক্রিপশন হলো আপনার পেজের একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ (প্রায় ১৫০-১৬০ অক্ষরের মধ্যে) যা টাইটেলের নিচে সার্চ রেজাল্টে প্রদর্শিত হয়।
  • এর সরাসরি র‍্যাঙ্কিং-এর উপর প্রভাব না থাকলেও, একটি আকর্ষণীয় মেটা ডেসক্রিপশন ব্যবহারকারীদের আপনার লিংকে ক্লিক করতে উৎসাহিত করে, যা আপনার ক্লিক-থ্রু রেট (CTR) বাড়ায়।
  • আপনার ফোকাস কিওয়ার্ড এবং প্রাসঙ্গিক সেকেন্ডারি কিওয়ার্ডগুলো স্বাভাবিকভাবে মেটা ডেসক্রিপশনে অন্তর্ভুক্ত করুন।
  • একটি স্পষ্ট কল টু অ্যাকশন (যেমন: "আরও জানুন", "এখনই কিনুন", "এখানে ক্লিক করুন") যোগ করার চেষ্টা করুন যা ব্যবহারকারীদের আপনার পেজে আসতে উৎসাহিত করে।
  • প্রতিটি পেজের জন্য একটি অনন্য মেটা ডেসক্রিপশন লিখুন যা পেজের মূল বিষয়বস্তু accuratelyভাবে বর্ণনা করে।

এই দুটি উপাদান, কন্টেন্ট এবং টাইটেল/মেটা ডেসক্রিপশন, আপনার অন পেইজ এসইও প্রচেষ্টার মূল ভিত্তি স্থাপন করে। এগুলোকে সঠিকভাবে অপটিমাইজ করার মাধ্যমেই আপনি সার্চ ইঞ্জিন এবং ব্যবহারকারী উভয়ের কাছে আপনার ওয়েবসাইটকে আরও আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারবেন।

3.  হেডিং ট্যাগ (Heading Tags - H1 to H6):

হেডিং ট্যাগগুলো (H1, H2, H3, H4, H5, H6) আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টের কাঠামো তৈরি করতে এবং বিভিন্ন অংশকে আলাদা করতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো শুধুমাত্র আপনার পাঠকদের জন্য কন্টেন্টকে আরও সহজে বোধগম্য করে তোলে না, বরং সার্চ ইঞ্জিনকেও আপনার পেজের বিষয়বস্তু বুঝতে সাহায্য করে।

হেডিং ট্যাগের ব্যবহার এবং গুরুত্ব:

  • কাঠামো তৈরি: হেডিং ট্যাগগুলো আপনার কন্টেন্টের একটি হায়ারারকিক্যাল কাঠামো তৈরি করে। H1 হলো প্রধান শিরোনাম, H2 হলো প্রধান উপশিরোনাম, H3 হলো H2-এর অধীনে উপশিরোনাম এবং এভাবে H6 পর্যন্ত চলতে থাকে। এই কাঠামো আপনার কন্টেন্টকে সুসংগঠিত করে এবং পাঠকদের জন্য তথ্য খুঁজে পাওয়া সহজ করে তোলে।
  • কিওয়ার্ডের ব্যবহার: হেডিং ট্যাগগুলোতে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড ব্যবহার করা আপনার পেজের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সার্চ ইঞ্জিনকে আরও স্পষ্ট ধারণা দিতে পারে। তবে, মনে রাখবেন কিওয়ার্ড স্টাফিং পরিহার করে স্বাভাবিক এবং প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
  • পঠনযোগ্যতা বৃদ্ধি: সঠিক হেডিং ব্যবহার আপনার লম্বা কন্টেন্টকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে, যা পাঠকদের জন্য পড়া এবং বুঝতে সহজ হয়।

H1 ট্যাগের তাৎপর্য এবং সঠিক ব্যবহার:

  • প্রধান শিরোনাম: H1 ট্যাগ হলো আপনার পেজের প্রধান শিরোনাম এবং এটি পেজের মূল বিষয়বস্তুকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। প্রতিটি পেজে একটি মাত্র H1 ট্যাগ ব্যবহার করা উচিত।
  • কিওয়ার্ডের অগ্রাধিকার: আপনার প্রধান ফোকাস কিওয়ার্ডটি H1 ট্যাগে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন, যদি তা স্বাভাবিকভাবে কন্টেন্টের সাথে মানানসই হয়।
  • ভিজ্যুয়াল হিরার্কি: H1 ট্যাগ সাধারণত পেজে সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ টেক্সট হিসেবে প্রদর্শিত হয়, যা ব্যবহারকারীদের পেজের মূল বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয়।

4. ইউআরএল স্ট্রাকচার (URL Structure):

আপনার ওয়েবসাইটের প্রতিটি পেজের ঠিকানা (URL) সার্চ ইঞ্জিন এবং ব্যবহারকারী উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। একটি পরিষ্কার এবং বোধগম্য ইউআরএল আপনার এসইও এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

পরিষ্কার এবং বোধগম্য ইউআরএলের গুরুত্ব:

  • ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা: একটি পরিষ্কার এবং বর্ণনামূলক ইউআরএল ব্যবহারকারীদের বুঝতে সাহায্য করে যে তারা কোন পেজে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, www.example.com/blog/seo-tutorial-part-2 এই ইউআরএলটি www.example.com/page?id=123 এর চেয়ে অনেক বেশি বোধগম্য।
  • সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন: সার্চ ইঞ্জিনগুলো ইউআরএলকে পেজের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা পেতে ব্যবহার করতে পারে। কিওয়ার্ড সমৃদ্ধ এবং বোধগম্য ইউআরএল আপনার র‍্যাঙ্কিং- সামান্য হলেও সাহায্য করতে পারে।
  • শেয়ারিং এবং লিংকিং: পরিষ্কার ইউআরএলগুলো শেয়ার করা এবং মনে রাখা সহজ, যা আপনার ওয়েবসাইটের প্রচার এবং ব্যাকলিংক তৈরিতে সহায়ক হতে পারে।

ছোট এবং কিওয়ার্ড সমৃদ্ধ ইউআরএল তৈরির নিয়ম:

  • ছোট রাখুন: লম্বা এবং জটিল ইউআরএল পরিহার করুন। ছোট ইউআরএল মনে রাখা এবং শেয়ার করা সহজ।
  • প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন: আপনার পেজের মূল ফোকাস কিওয়ার্ডটি ইউআরএলে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন। শব্দগুলোকে হাইফেন (-) দিয়ে আলাদা করুন (আন্ডারস্কোর (_) ব্যবহার করা উচিত নয়)
  • অপ্রয়োজনীয় শব্দ বাদ দিন: "এবং", "অথবা", "the", "a" এর মতো অপ্রয়োজনীয় শব্দ ইউআরএল থেকে বাদ দিন।
  • ছোট হাতের অক্ষর ব্যবহার করুন: ইউআরএলে ছোট হাতের অক্ষর ব্যবহার করা ভালো অভ্যাস, কারণ কিছু সার্ভার কেস-সেনসিটিভ হতে পারে।
  • ডাইনামিক প্যারামিটার এড়িয়ে চলুন: যদি সম্ভব হয়, ?id=123 এর মতো ডাইনামিক প্যারামিটার ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন এবং স্ট্যাটিক, বর্ণনামূলক ইউআরএল তৈরি করুন।

5. ইন্টারনাল লিংকিং (Internal Linking):

ইন্টারনাল লিংকিং হলো আপনার ওয়েবসাইটের এক পেজ থেকে অন্য প্রাসঙ্গিক পেজে লিংক স্থাপন করার প্রক্রিয়া। এটি আপনার ওয়েবসাইটের এসইও এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইন্টারনাল লিংকের গুরুত্ব:

  • পেজের অথরিটি বৃদ্ধি: ইন্টারনাল লিংকিং আপনার ওয়েবসাইটের "লিংক জুস" (লিংক ইক্যুইটি) এক পেজ থেকে অন্য পেজে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে, যা কম গুরুত্বপূর্ণ পেজগুলোর অথরিটি বাড়াতে সহায়ক।
  • ব্যবহারকারীর নেভিগেশন: ইন্টারনাল লিংক ব্যবহারকারীদের আপনার ওয়েবসাইটের অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট খুঁজে পেতে সাহায্য করে, যা তাদের Engagement বাড়ায় এবং বাউন্স রেট কমায়।
  • ক্রলিবিলিটি এবং ইনডেক্সিং: ইন্টারনাল লিংক সার্চ ইঞ্জিন বটদের আপনার ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেজ খুঁজে বের করতে এবং সেগুলোকে ইনডেক্স করতে সাহায্য করে। একটি ভালো ইন্টারনাল লিংকিং কাঠামো আপনার ওয়েবসাইটের সকল গুরুত্বপূর্ণ পেজকে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে অ্যাক্সেসযোগ্য করে তোলে।
  • কন্টেক্সট প্রদান: ইন্টারনাল লিংক ব্যবহার করে আপনি একটি পেজের বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য পেজের ধারণা দিতে পারেন, যা সার্চ ইঞ্জিনকে আপনার কন্টেন্টের প্রেক্ষাপট বুঝতে সাহায্য করে।

কার্যকর ইন্টারনাল লিংকিং কৌশল:

  • প্রাসঙ্গিক লিংক তৈরি করুন: শুধুমাত্র সেই পেজগুলোর সাথে লিংক করুন যা বর্তমানে দেখা পেজের বিষয়বস্তুর সাথে প্রাসঙ্গিক।
  • অ্যাঙ্কর টেক্সট ব্যবহার করুন: লিংকের জন্য বর্ণনামূলক এবং কিওয়ার্ড সমৃদ্ধ অ্যাঙ্কর টেক্সট (যে টেক্সটের উপর ক্লিক করা হয়) ব্যবহার করুন। তবে, অতিরিক্ত কিওয়ার্ড স্টাফিং পরিহার করুন।
  • গুরুত্বপূর্ণ পেজগুলোর দিকে বেশি লিংক করুন: আপনার ওয়েবসাইটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেজগুলোর দিকে বেশি ইন্টারনাল লিংক তৈরি করুন।
  • নতুন এবং পুরনো কন্টেন্টের মধ্যে লিংক করুন: আপনার নতুন কন্টেন্টকে পুরনো, প্রাসঙ্গিক কন্টেন্টের সাথে এবং পুরনো কন্টেন্টকে নতুন, প্রাসঙ্গিক কন্টেন্টের সাথে লিংক করুন।
  • অতিরিক্ত লিংকিং পরিহার করুন: একটি পেজে অত্যধিক সংখ্যক ইন্টারনাল লিংক ব্যবহার করা বিভ্রান্তিকর হতে পারে এবং এর এসইও-তে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

এই উপাদানগুলো সঠিকভাবে অপটিমাইজ করার মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের অন পেইজ এসইও-কে অনেক উন্নত করতে পারবেন। পরবর্তী অংশে আমরা আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অন পেইজ এসইও উপাদান নিয়ে আলোচনা করব।

 6. ইমেজ অপটিমাইজেশন (Image Optimization):

আপনার ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত ছবিগুলো শুধুমাত্র আপনার কন্টেন্টকে আকর্ষণীয় করে না, বরং সঠিকভাবে অপটিমাইজ করা হলে এগুলো আপনার এসইও-তেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ফাইলের নাম অপটিমাইজ করার নিয়ম:  

আপনার ছবির ফাইলের নাম বর্ণনামূলক এবং প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সমৃদ্ধ হওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, "red-womens-dress.jpg" "IMG_4567.jpg"-এর চেয়ে অনেক বেশি তথ্যপূর্ণ। শব্দগুলোকে হাইফেন (-) দিয়ে আলাদা করুন।
 

অল্টার টেক্সট (Alt Text) এর গুরুত্ব এবং লেখার নিয়ম:  

অল্টার টেক্সট হলো ছবির একটি টেক্সট ডেসক্রিপশন যা ছবি লোড না হলে প্রদর্শিত হয় এবং স্ক্রিন রিডার ব্যবহারকারীদের জন্য ছবির বিষয়বস্তু বর্ণনা করে। এসইও-এর জন্য অল্টার টেক্সট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি সার্চ ইঞ্জিনকে আপনার ছবির বিষয়বস্তু বুঝতে সাহায্য করে।
  • আপনার ছবির বিষয়বস্তু সঠিকভাবে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করুন।
  • প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন, তবে কিওয়ার্ড স্টাফিং পরিহার করুন।
  • যদি ছবিটি কোনো নির্দিষ্ট পণ্যের হয়, তাহলে পণ্যের নাম এবং মডেল নম্বর উল্লেখ করতে পারেন।
  • অল্টার টেক্সট সংক্ষিপ্ত এবং তথ্যপূর্ণ রাখুন।

ইমেজের সাইজ কমানোর গুরুত্ব: 

 বড় আকারের ছবি আপনার ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড কমিয়ে দিতে পারে, যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা এবং এসইও উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। ছবি আপলোড করার আগে সেগুলোকে অপটিমাইজ করে ফাইলের সাইজ কমানো উচিত, তবে ছবির গুণমান বজায় রাখা জরুরি। বিভিন্ন অনলাইন টুলস এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করে ছবির সাইজ কমানো যায়।
 

7. মোবাইল-ফ্রেন্ডলিনেস (Mobile-Friendliness):

বর্তমানে বেশিরভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মোবাইল ডিভাইস থেকে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে। গুগল মোবাইল-ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইটগুলোকে ডেস্কটপ সংস্করণের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয়। তাই, আপনার ওয়েবসাইট মোবাইল ডিভাইসের জন্য অপটিমাইজ করা অপরিহার্য।

মোবাইল-ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইটের গুরুত্ব (গুগলের র‍্যাংকিং ফ্যাক্টর): 

গুগল স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে মোবাইল-ফ্রেন্ডলিনেস একটি গুরুত্বপূর্ণ র‍্যাংকিং ফ্যাক্টর। যদি আপনার ওয়েবসাইট মোবাইল ডিভাইসে সঠিকভাবে প্রদর্শিত না হয় এবং ব্যবহার করা কঠিন হয়, তাহলে আপনার র‍্যাঙ্কিং উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।

রেসপন্সিভ ডিজাইন এবং মোবাইল অপটিমাইজেশনের মূল বিষয়:

  • রেসপন্সিভ ডিজাইন: রেসপন্সিভ ওয়েবসাইট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন স্ক্রিন সাইজের (ডেস্কটপ, ট্যাবলেট, মোবাইল) সাথে নিজেদের মানিয়ে নেয়। এটি একটি ওয়েবসাইটকে বিভিন্ন ডিভাইসে সুন্দরভাবে প্রদর্শন করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
  • মোবাইল অপটিমাইজেশন: এর মধ্যে রয়েছে ছোট স্ক্রিনের জন্য উপযুক্ত ডিজাইন, স্পর্শ-বান্ধব নেভিগেশন, দ্রুত লোডিং স্পিড (মোবাইল ডেটা সাধারণত ধীরগতির হয়), এবং অপ্রয়োজনীয় উপাদান বাদ দেওয়া যা মোবাইলে লোড হতে বেশি সময় নেয়। গুগল মোবাইল-ফ্রেন্ডলি টেস্ট টুল ব্যবহার করে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের মোবাইল-ফ্রেন্ডলিনেস পরীক্ষা করতে পারেন।

8. ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা (User Experience - UX):

ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা (UX) আপনার ওয়েবসাইটের সামগ্রিক পারফরম্যান্স এবং এসইও-এর উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। গুগল চায় ব্যবহারকারীরা তাদের অনুসন্ধানের ফলাফলে আসা ওয়েবসাইটগুলোতে সন্তুষ্ট হোক। একটি খারাপ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (UX) আপনার বাউন্স রেট বাড়াতে পারে এবং র‍্যাঙ্কিং কমাতে পারে।

ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড (Page Speed) এর প্রভাব:  

একটি ধীরগতির ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের হতাশ করে এবং তারা দ্রুত সেটি ত্যাগ করে। গুগল পেজ স্পিডকে একটি গুরুত্বপূর্ণ র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচনা করে। আপনার ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড উন্নত করার জন্য ইমেজ অপটিমাইজেশন, ক্যাশিং ব্যবহার, কম HTTP অনুরোধ এবং ফাস্ট হোস্টিং ব্যবহার করা উচিত। গুগল পেজস্পিড ইনসাইটস টুলের মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের স্পিড পরীক্ষা করতে এবং উন্নতির জন্য পরামর্শ পেতে পারেন।

ওয়েবসাইটের ডিজাইন এবং নেভিগেশন এর গুরুত্ব:  

আপনার ওয়েবসাইটের ডিজাইন পরিষ্কার, আকর্ষণীয় এবং ব্যবহার করা সহজ হওয়া উচিত। একটি সুস্পষ্ট এবং সহজ নেভিগেশন ব্যবহারকারীদের আপনার ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেজে সহজে যেতে সাহায্য করে। এলোমেলো ডিজাইন এবং জটিল নেভিগেশন ব্যবহারকারীদের হতাশ করতে পারে এবং বাউন্স রেট বাড়াতে পারে। 
 

বাউন্স রেট (Bounce Rate) কমানোর উপায়:  

বাউন্স রেট হলো সেই হার যা নির্দেশ করে কত শতাংশ ব্যবহারকারী আপনার ওয়েবসাইটের একটি পেজে এসে অন্য কোনো পেজে না গিয়ে ফিরে যায়। উচ্চ বাউন্স রেট ইঙ্গিত দিতে পারে যে আপনার ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। বাউন্স রেট কমানোর জন্য উচ্চ মানের এবং প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট তৈরি করা, ইন্টারনাল লিংকিং ব্যবহার করা, ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড উন্নত করা এবং একটি ভালো ইউজার এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করা জরুরি।

এই উপাদানগুলো সঠিকভাবে অপটিমাইজ করার মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের অন পেইজ এসইও-কে সম্পূর্ণ করতে পারবেন এবং সার্চ ইঞ্জিন র‍্যাঙ্কিং- উল্লেখযোগ্য উন্নতি লাভ করতে পারবেন। মনে রাখবেন, অন পেইজ এসইও একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ উন্নতির প্রয়োজন।

অন পেইজ এসইও-এর সেরা অনুশীলন (Best Practices for On-Page SEO):

অন পেইজ এসইও একটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে কিছু সেরা অনুশীলন দেওয়া হলো যা আপনার ওয়েবসাইটের র‍্যাংকিং উন্নত করতে এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা বাড়াতে সাহায্য করবে:

ফোকাস কিওয়ার্ডের উপর ভিত্তি করে কন্টেন্ট তৈরি করা: 

আপনার কন্টেন্ট তৈরি করার আগে, আপনার লক্ষ্যযুক্ত ফোকাস কিওয়ার্ড সনাক্ত করুন এবং সেটিকে কেন্দ্র করে আপনার কন্টেন্ট তৈরি করুন। এই কিওয়ার্ডটি আপনার কন্টেন্টের মূল বিষয় হওয়া উচিত এবং আপনার কন্টেন্টের গঠন এবং গভীরতা নির্ধারণে সহায়তা করা উচিত। 
 

ব্যবহারকারীর জন্য মূল্যবান এবং তথ্যপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করা: 

শুধুমাত্র সার্চ ইঞ্জিনকে খুশি করার জন্য কন্টেন্ট তৈরি করবেন না। আপনার কন্টেন্ট ব্যবহারকারীদের জন্য মূল্যবান এবং তথ্যপূর্ণ হওয়া উচিত। এটি তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে, তাদের সমস্যা সমাধান করতে বা তাদের আগ্রহের বিষয় সরবরাহ করতে পারে। উচ্চ-মানের কন্টেন্ট তৈরি করার উপর মনোযোগ দিন যা পাঠকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এবং তাদের ওয়েবসাইটে আরও বেশি সময় ধরে রাখে। 
 

স্বাভাবিক এবং প্রাসঙ্গিকভাবে কিওয়ার্ড ব্যবহার করা (কিওয়ার্ড স্টাফিং পরিহার করা):  

আপনার কন্টেন্টে কিওয়ার্ড ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি স্বাভাবিক এবং প্রাসঙ্গিকভাবে করা উচিত। কিওয়ার্ড স্টাফিং (অস্বাভাবিকভাবে ঘন ঘন কিওয়ার্ড ব্যবহার করা) পরিহার করুন, কারণ এটি সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা স্প্যাম হিসাবে বিবেচিত হতে পারে এবং আপনার ওয়েবসাইটের র‍্যাংকিং কমাতে পারে। 
 

নিয়মিত কন্টেন্ট আপডেট করা: 

পুরনো এবং অপ্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট আপনার ওয়েবসাইটের র‍্যাংকিংয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আপনার কন্টেন্টকে নিয়মিত আপডেট করুন, নতুন তথ্য যোগ করুন এবং ভুল সংশোধন করুন। নিয়মিত কন্টেন্ট আপডেট করা আপনার ওয়েবসাইটকে সতেজ এবং প্রাসঙ্গিক রাখে, যা সার্চ ইঞ্জিন এবং ব্যবহারকারী উভয়ের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। 
 

মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য ওয়েবসাইট অপটিমাইজ করা: 

বর্তমানে, বেশিরভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মোবাইল ডিভাইস থেকে ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করে। গুগল মোবাইল-ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইটকে অগ্রাধিকার দেয়। তাই, আপনার ওয়েবসাইটটি মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য সম্পূর্ণরূপে অপ্টিমাইজ করা উচিত। 

ওয়েবসাইটের স্পিড এবং ইউজার এক্সপেরিয়েন্স উন্নত করা:  

একটি দ্রুত লোডিং ওয়েবসাইট এবং একটি ভালো ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (UX) আপনার ওয়েবসাইটের র‍্যাংকিং এবং ব্যবহারকারীর সন্তুষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ওয়েবসাইটের স্পিড অপটিমাইজ করুন, একটি পরিষ্কার এবং সহজবোধ্য ডিজাইন ব্যবহার করুন এবং আপনার ওয়েবসাইটের নেভিগেশন সহজ করুন।
 

পরিশেষ:

অন পেইজ এসইও আপনার ওয়েবসাইটের অনলাইন সাফল্যের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। এটি আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন এবং ব্যবহারকারী উভয়ের জন্য অপ্টিমাইজ করে, যার ফলে আপনার র‍্যাংকিং উন্নত হয়, ট্র্যাফিক বৃদ্ধি পায় এবং আপনার ব্যবসা সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এই টিউটোরিয়ালে, আমরা অন পেইজ এসইও-এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করেছি এবং কিভাবে আপনার ওয়েবসাইটকে অপটিমাইজ করতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত গাইডলাইন প্রদান করেছি। এই নির্দেশিকা অনুসরণ করে, আপনি আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট, কাঠামো এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে পারবেন, যা দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য নিয়ে আসবে।

আমাদের পরবর্তী টিউটোরিয়ালে, আমরা টেকনিকাল এসইও নিয়ে আলোচনা করব, যেখানে আমরা একটি ওয়েবসাইটের প্রযুক্তিগত দিকগুলো অপটিমাইজ করা হয় তা দেখবো, যাতে সার্চ ইঞ্জিন ক্রলাররা সহজে আমাদের সাইট সহজে খুঁজে পায় এবং ইন্ডেক্স করতে পারে।

আপনাদের যদি এই পর্ব নিয়ে কোনো মন্তব্য বা প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আমরা আপনাদের জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে এবং আপনাদের এসইও যাত্রা আরও মসৃণ করতে সর্বদা প্রস্তুত।

আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ! পরবর্তী পর্বে আবার দেখা হবে।

এসইও টিউটোরিয়াল - তৃতীয় পর্ব : টেকনিক্যাল এসইও